মাত্রই ঘন্টা পড়লো। ষ্টেশন পাড়াও সরগরম হয়ে উঠল। চায়ে চিনি মেশানো চামুচটার খট খট অাওয়াজটাও একটু বেগ পেল বোধয়। এ দোকানীর চা বানানোর স্টাইলটা বেশ নান্দনিক।
হদ্দ গরমে মানকীটুপি পড়া চেনা ভদ্রলোকটি সেলফোনের বেহিসেবী উচ্যবাচ্য বুঝি থামাবেন এবার। ফোনের ওপারের মানুষটির সাথে প্রায় ৩০ মিনিট যাবৎ ২০০ টাকার হিসেব মেলাচ্ছেন ওনি।
লাল কুর্তা পরা দু চার জন কুলিদের অনাগোনা এবার চোখে পড়ছে। আচ্ছা কুলিদের ঘাড়ের লম্বা গামছাটা কি আসলে শুধুই ঘাড়ে বর্তানো গামছা?
কে জানে ওটা হয়তো গামছার মোড়কে ঘাড়ে বর্তানো দ্বায়ীত্বের লম্বা ফর্দ। যাতে, পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবার, ছেলটার স্কুল মাইনে দেবার , বড় মেয়েটার বিয়ের যৌতুক দেবার, স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাবার মত অলিখিত সব দায়দায়িত্বের লম্বা লিষ্টি ফাঁদা আছে ওতে।
তবে ঐ গামছার মহাদ্বায়ীত্ব হলো তার বাহকের কষ্ট, গ্লানি, জীর্ণতা সব মুছে নেওয়া। যেটাকে আপনি আমি শুধুই ঘাম বলে জানি।
অন্ধ বয়াতীর শরীটা আজ যে বিশেষ ভালোনাই সেটা গানের মাঝপথে খুক খুক কাশিতেই স্পষ্ট হয়। ঘণ্টা বাজতেই শেষ চেষ্টা স্বরুপ গলাটা বুঝি আরো চড়াও হলো বয়াতীর। সেইথেকে চারপাশে ঘিরে রাখা স্রোতাদের ওনি বিরামহীন ভাবে গান শুনিয়েই চলছেন। দু-চার জনের অার্জি অনুযায়ী তাদের পচ্ছন্দের গানগুলোও শুনিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়
ওটা কি শুধুই গান? নাকি ওটা হারতে বসা এক যোদ্ধার বুকফাটা করুণ অর্তনাদ। যে অার্তনাদ ঐ সকল ঘিরে রাখা শ্রোতাদের কানে কখনো পৌঁছায়না। পৌঁছালে বয়াতির শূণ্য থালায় দু-চার খানা সিকি তো জমতো নিশ্চই!
কোণে ঠায় দাঁড়ানো যুবকটি এখনো আনমনে সিগারেট ফুঁকছেনই, মুখে জমানো একরাশ ধোঁয় ঘৃণা ভরে উপরে পাঠিয়ে কি যেন এক সমীকরণ মেলানোতে মগ্ন ওনি। কে বলবে বয়াতীর সেতারার টুং টাং মেশানো দুঃখতান আর দরদ মাখানো ব্যাথার গান যুবকের মনে বিরহের সঞ্চার করছে কিনা! তিনিও কি প্রেমে ব্যার্থ? তবে কি ফর্সা ছেলেরাও ব্যার্থ হয়??
সবাই এখানে মুখাভিনেতা। যে যার মত অভিনয় করেই চলছে। যেখানে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলেই নায়ক। খলনায়ক তো সবার নিয়তিই।
.
ঐ ট্রেন আসছে, এবার আমারও অভিনয়ের পালা...............
No comments:
Post a Comment